আমাদের দেশে বলতে গেলে ভারতীয় উপমহাদেশে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর দুআ-মুনাজাতের প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়। এ বিষয় এখন কিছু আলোচনা পেশ করছি। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত শেষে দু‘আ কবুল হওয়ার কথা বহু সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত।
তাহলে এ নিয়ে বিতর্ক কেন? আসলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দু‘আ নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক হল এর পদ্ধতি নিয়ে। যে পদ্ধতিতে দু‘আ করা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এভাবে দু‘আ করেছিলেন কিনা? তাই আমি এখানে আলোচনা করব সেই দু‘আ-মুনাজাত নিয়ে যার মধ্যে নিম্নোক্ত সবকটি শর্ত বিদ্যমান:
এক. পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দুআ করা।
দুই. সেই দুআ-মুনাজাত জামাআতের সাথে করা।
তিন. প্রতিদিন প্রতি ফরজ সালাত শেষে দুআ-মুনাজাত করা।
এ শর্তাবলি বিশিষ্ট দুআ-মুনাজাত কতটুকু সুন্নত সম্মত সেটাই এ অধ্যায়ের মূল আলোচ্য বিষয়।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত আদায়ের পর প্রচলিত মুনাজাত করা না করার ব্যাপারে আমাদের দেশের লোকদের সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত দেখা যায়।
এক. যারা সালাম ফিরানোর পর বসে বসে কিছুক্ষণ বিভিন্ন যিকর-আযকার আদায় করেন যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
দুই. যারা সালাম ফিরানোর পর কোন যিকির-আযকার না করে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান সুন্নত নামায আদায়ের জন্য।
তিন. যারা সালাম ফিরানোর পর সর্বদা ইমাম সাহেবের সাথে একত্রে মুনাজাত করেন। মুনাজাত শেষ হওয়ার পর সুন্নত নামায আদায় করেন।
আর এ তিন ধরনের লোকদেরই এ সকল আমলের সমর্থনে কোন না কোন দলিল প্রমাণ রয়েছে।
প্রথম দলের দলিল-প্রমাণ স্পষ্ট। তাহল বুখারী ও মুসলিমসহ বহু হাদীসের কিতাবে সালাতের পর যিকির-আযকার অধ্যায়ে বিভিন্ন যিকিরের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম আমল করেছেন। অনেক ইমাম ও উলামায়ে কেরাম এ যিকির-আযকার সম্পর্কে স্বতন্ত্র পুস্তক সংকলন করেছেন।
দ্বিতীয় দলের প্রমাণ হল এই হাদীসটি
عن عائشة رضي الله عنها قالت كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا سلم لم يقعد إلا مقدار ما يقول اللهم أنت السلام ومنك السلام تباركت يا ذا الجلال والإكرام ” أخرجه ابن ماجة والنسائي والترمذي وقال حديث حسن صحيح.
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন তখন ‘আল্লাহুম্মা আনতাচ্ছালাম ওয়ামিনকাচ্ছালাম তাবারাকতা ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম’ পড়তে যতটুকু সময় লাগে তার চেয়ে বেশি সময় বসতেন না।
বর্ণনায় : তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ
তারা এ হাদীস দ্বারা বুঝে নিয়েছেন যে, এ যিকির টুকু আদায় করতে যতটুকু সময় লাগে এর চেয়ে বেশি বসা ঠিক নয়। তাই তাড়াতাড়ি সুন্নত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
আসলে এ হাদীস দ্বারা তারা যা বুঝেছেন তা সঠিক নয়।
হাদীসটির ব্যাখ্যা হল, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু ইমাম ছিলেন তাই তিনি সালাম ফিরানোর পর এতটুকু সময় মাত্র কেবলামুখী হয়ে বসতেন এরপর তিনি মুসল্লিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। আর তিনি যে প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বসতেন তা বহু সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
(মজমু আল ফাতাওয়া : ইমাম ইবনে তাইমিয়া)
এ হাদীস দ্বারা কখনো প্রমাণিত হয় না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরিয়ে এ দু‘আ টুকু পড়ে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যেতেন সুন্নত সালাত আদায়ের জন্য।
ফরজ সালাত আদায়ের পর যিকির, তাসবীহ, তাহলীল বর্জন করে তাড়াতাড়ি সুন্নত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া মোটেও সুন্নত নয়। বরং সুন্নত হল সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যিকির, দু‘আ, তাসবীহ, তাহলীল সাধ্য মত আদায় করে তারপর সুন্নত আদায় করা।
তৃতীয় দল যারা ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত ভাবে (জামাআতের সাথে) মুনাজাত করেন তাদের দলিল হল ঐ সকল হাদীস যাতে সালাত শেষে দু‘আ কবুলের কথা বলা হয়েছে এবং দু‘আ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ সকল হাদীস ছাড়া তাদের এ কাজের সমর্থনে হাদীস থেকে সরাসরি অন্য কোন প্রমাণ নেই। এমন কোন হাদীস তারা পেশ করতে পারবেন না যাতে দেখা যাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক সালাত জামাআতের সাথে আদায় শেষে সকলকে নিয়ে সর্বদা হাত তুলে মুনাজাত করেছেন।
তারা যে সকল হাদীস প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে চান তার শিরোনাম হল الدعاء عقيب الصلوات ، الدعاء دبر الصلوات তারা মনে করে নিয়েছেন আকীবাস সালাত ও দুবুরাস সালাত অর্থ সালাম ফিরানোর পর। আসলে তা নয়। এর অর্থ হল সালাতের শেষ অংশে। এ সকল হাদীসে সালাতের শেষ অংশে অর্থাৎ শেষ বৈঠকে দরূদ পাঠ করার পর সালামের পূর্বে দু‘আ করার কথা বলা হয়েছে। পরিভাষায় যা দু‘আয়ে মাছুরা হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। সালাত শেষে দু‘আ কবুল সম্পর্কে যত হাদীস এসেছে তা সবগুলো দু‘আ মাছুরা সম্পর্কে। যার সময় হল সালাম ফিরানোর পূর্বে। আর দু‘আ মাছুরা শুধু একটা নয়, অনেক। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সালাতের শেষে দু‘আ সংক্রান্ত এ সকল হাদীসে ‘বা’দাস সালাত’ বলা হয়নি। হাদীস গ্রন্থে এ সকল দু‘আকে الأدعياء دبر الصلواة أو الدعاء عقيب الصلاة (সালাত শেষের দুআ) অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে দুটো বিষয়; একটা হল সালাত শেষের দু‘আ। দ্বিতীয়টা হল সালাত শেষের যিকির। প্রথমটির স্থান হল সালাম ফিরানোর পূর্বে। আর দ্বিতীয়টির স্থান হল সালাম ফিরানোর পর।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ), ইবনুল কায়্যিম (রহ) প্রমুখ উলামায়ে কেরামের মত এটা-ই।
এ মতটা কুরআন ও হাদীসের আলোকে বেশি যুক্তি গ্রাহ্য। বান্দা যখন সালাতে থাকে তখন সে আল্লাহর নিকটে অবস্থান করে। দু‘আ মুনাজাতের সময় তখনই। যখন সালাতের সমাপ্তি ঘোষিত হল তখন নয়। তখন সময় হল আল্লাহর যিকিরের, যেমন আল্লাহ বলেন
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِكُمْ. (سورة النساء :103)
যখন তোমরা সালাত শেষ করলে তখন দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে।
এ সম্পর্কিত হাদীসগুলোর ভাষা এবং সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমলসমূহ গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে এ বিষয়টিই বুঝে আসে যে, সালাম ফিরানোর পরের সময়টা দু‘আ করার সময় নয়, যিকির করার সময়।
তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরজ সালাতের পর কখনো কি দু‘আ করেননি? হা করেছেন। তবে তা সম্মিলিতভাবে নয়।
যেমন হাদীসে এসেছে
عن البراء بن عازب رضي الله عنه قال : كنا إذا صلينا خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم أحيانا نكون عن يمينه يقبل علينا بوجهه فسمعته يقول : رب قني عذابك يوم تبعث عبادك” (رواه البخاري)
আল-বারা ইবনে আযেব (রা.) বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে সালাত আদায় করতাম, তিনি আমাদের দিকে মুখ করতেন, কখনো কখনো শুনতাম তিনি বলতেন, ‘‘হে আল্লাহ ! আপনার শাস্তি থেকে আমাকে বাঁচান, যে দিন আপনি আপনার বান্দাদের উঠাবেন।’’
বর্ণনায় : বুখারী
জামাআতের সাথে তিনি মুসল্লিদের নিয়ে দু‘আ করেছেন, এমন কোন বর্ণনা নেই। যা আছে তা তার বিপরীত। যেমন বর্ণিত হাদীসটির প্রতি লক্ষ্য করুন! সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন। বলেছেন ‘‘আমাকে বাঁচান…।’’ সকলকে সাথে নিয়ে দুআটি করলে বলতেন ‘‘আমাদেরকে বাঁচান।’’
আরেকটি হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করুন :
قال النبي صلى الله عليه وسلم لمعاذ بن جبل ” لا تدعن في دبر كل صلاة أن تقول اللهم أعني على ذكرك وشكرك وحسن عبادتك. )رواه أبو داود و النسائي)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুআয বিন জাবাল (রা.) কে বলেছেন, ‘‘তুমি অবশ্যই প্রত্যেক সালাতের পর বলবে, ‘হে আল্লাহ! আপনার যিকির, আপনার শোকর, আপনার জন্য উত্তম ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন।’’
বর্ণনায় : আবু দাউদ, নাসায়ী
দেখুন! প্রখ্যাত সাহাবী মুআয বিন জাবাল (রা.) কওমের ইমাম ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ইয়েমেনের গভর্নর, শিক্ষক ও ইমাম হিসেবে পাঠিয়ে ছিলেন। তিনি সালাতে ইমামতি করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এ দুআটি সকলকে নিয়ে করার নির্দেশ দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা দেননি। তিনি তাকে একা একা দুআটি করার জন্য বলেছেন। হাদীসের ভাষাই তার প্রমাণ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরানোর পর তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলেছেন। তিনি যদি এটা সকলকে নিয়ে করতেন তাহলে ‘নাস্তাগফিরুল্লাহ’ (আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) বলতেন।
যারা ফরজ সালাত শেষে কোন যিকির-আযকার না করে উঠে গেল তারা একটা সুন্নত (মুস্তাহাব) ছেড়ে দিল। আবার যারা সালাত শেষে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করে উঠে গেল তারা একটা সুন্নত বাদ দিয়ে সে স্থানে অন্য একটি বেদআত আমল করল।
তাই সারকথা হল, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের পর সব সময় জামাআতের সাথে মুনাজাত করা একটি বিদআত। যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেন নাই, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনগন করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই।
তবে যদি কেহ জামাতে সালাত আদায়ের পর একা একা দু‘আ মুনাজাত করেন তা সুন্নতের খেলাপ হবে না। এমনিভাবে ইমাম সাহেব যদি সকলকে নিয়ে বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে কোন কোন সময় দু‘আ-মুনাজাত করেন তবে তা নাজায়েয হবে না।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ). ইবনুল কায়্যিম (রহ). মুফতীয়ে আজম ফয়জুল্লাহ (রহ). সহ অনেক আলেম-উলামা এ মত ব্যক্ত করেছেন।
সালাত শেষে যে সকল দুআ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত:
আমি এখানে সালাত শেষে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সকল দু‘আ ও যিকির আদায় করেছেন ও করতে বলেছেন তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করতে চাই। যাতে পাঠক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই সুন্নতকে আমল হিসেবে গ্রহণ করেন এবং এ সম্পর্কিত বিদআত পরিহার করেন।
عن ثوبان رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا انصرف من صلاته استغفر ثلاثا وقال اللهم أنت السلام ومنك السلام تباركت يا ذالجلال والإكرام. قيل للأوزاعي وهو أحد رواة الحديث كيف الاستغفار؟ قال : يقول : أستغفر الله، أستغفر الله، أستغفر الله. رواه مسلم
ছাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাত শেষ করতেন তখন তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং বলতেন, আল্লাহুম্মা আনতাচ্ছালাম . . . (হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময় এবং তোমার নিকট হতে শান্তির আগমন, তুমি কল্যাণময়, হে মর্যাদাবান, মহানুভব!
ইমাম আওযায়ীকে জিজ্ঞেস করা হল -যিনি এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাত শেষে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন কীভাবে?
বললেন, তিনি বলতেন, আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি)। বর্ণনায় : মুসলিম
كتب المغيرة بن شعبة إلى معاوية رضي الله عنه: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا فرغ من الصلاة وسلم قال : لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير. اللهم لا مانع لما أعطيت ولا معطي لما منعت ولا ينفع ذا الجد منك الجد. (أخرجه البخاري ومسلم)
মুগীরা ইবনে শোবা রা. মুয়াবিয়া রা. এর কাছে লিখেছেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাত শেষ করে সালাম ফিরাতেন তখন বলতেন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, আল্লাহুম্মা লা- মানেআ লিমা আ’তাইতা ওয়ালা মু’তিয়া লিমা মানা’তা ওয়ালা ইয়ান ফাউ’ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক তার কোন শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং প্রশংসা তার। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ আপনি যা দান করেন তা বাধা দেয়ার কেহ নেই। আর আপনি যা বাধা দিবেন তা দেয়ার মত কেহ নেই। আর আযাবের মুকাবেলায় ধনবানকে তার ধন কোন উপকার করতে পারে না)
বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম
عن عبد الله بن الزبير رضي الله عنهما أنه كان يقول دبر كل صلاة حين يسلم : لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير. لا حول ولا قوة إلا بالله . لا إله إلا الله ولا نعبد إلا إياه له النعمة وله الفضل وله الثناء الحسن، لا إله إلا الله مخلصين له الدين ولو كره الكافرون. قال ابن الزبير : وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم يهلل بـهن دبر كل صلاة. (رواه مسلم)
আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি প্রত্যেক সালাতের শেষে সালাম ফিরানোর পর বলতেন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু, লাহুন নি’মাতু ওয়ালাহু ফাযলু ওয়ালাহুছ ছানাউল হাসান, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিছীনা লাহুদ্দীন ওয়ালাও কারিহাল কাফিরূন। (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক তার কোন শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং প্রশংসা তার। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত গুনাহ থেকে বিরত থাকার ও ইবাদত করার শক্তি কারো নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আমরা তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করি না। সমস্ত অনুগ্রহ ও শ্রেষ্ঠত্ব তারই। সকল সুন্দর ও ভাল প্রশংসা তারই জন্য। তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। আমরা ধর্মকে একমাত্র তারই জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছি, যদিও কাফেরা তা পছন্দ করে না)
ইবনে যুবাইর(রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক সালাতের শেষে এ বাক্যগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর ইলাহিয়্যাতের ঘোষণা দিতেন।
বর্ণনায় : মুসলিম
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : من سبح الله في دبر كل صلاة ثلاثا وثلاثين وحمد الله ثلاثا وثلاثين وكبر الله ثلاثا وثلاثين وقال تمام المائة لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير، غفرت خطاياه وإن كانت مثل زبد البحر. (رواه مسلم)
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ বলবে, তেত্রিশ বার আলহামদু লিল্লাহ বলবে ও তেত্রিশ বার আল্লাহু আকবার বলবে এরপর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর (আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক তার কোন শরীক নেই। রাজত্ব তারই এবং প্রশংসা তার। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান) বলে একশ বাক্য পূর্ণ করবে তার পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।
বর্ণনায় : মুসলিম
এ ছাড়াও সালাতের পর আরো অনেক যিকির ও দু‘আর কথা হাদীসে এসেছে। সেগুলো আদায় করা যেতে পারে। যেমন সুরা ইখলাছ, সূরা ফালাক, সুরা নাছ পাঠ করার কথা এসেছে। আয়াতুল কুরসী পাঠ করার বর্ণনা এসেছে ।
এ সকল দু‘আ যে সবগুলো একই সাথে আদায় করতে হবে এমন কোন বাধ্য বাধকতা নেই। সময় ও সুযোগ মত যা সহজ সেগুলো আদায় করা যেতে পারে। মোট কথা হল এ সুন্নতটি যেন আমরা কোন কারণে ভুলে না যাই সে বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। অনেককে নামায শেষে এমন কিছু আমল করতে দেখা যায় যেগুলো হাদীসে পাওয়া যায় না, সেগুলো বর্জন করা উচিত। যেমন মাথায় হাত দিয়ে কিছু পাঠ করা বা কিছু পাঠ করে চোখে ফুঁক দেয়া ইত্যাদি। আবার অনেকে (ইমাম অবস্থায়) সালাম ফিরানোর পরে কিবলা থেকে সামান্য ডানদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে। এরও কোন দলীল নেই। কথিত থাকে যে, ইরাকে বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানীর কবরের দিকে মুখ করে বসা এর উদ্দেশ্য। সত্যাসত্য আল্লাহতাআলাই ভাল জানেন, তবে সত্যি হয়ে থাকলে এটা শিরক। বহু সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরানোর পর অল্প সময় কেবলামুখী হয়ে বসতেন এরপর তিনি মুসল্লিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। প্রমাণিত সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে শিরক ও বিদআত আকড়ে ধরা থেকে আল্লাহ আমাদের বেচে থাকার তওফিক দান করুন।
No comments:
Post a Comment